ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বীর নিবাসের চাবি

ছবি সংগৃহীত

 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : আজ ভাষা আন্দোলনের রক্তস্নাত একটি দিন। ১৭৫৭ সালে পলাশীতে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। ইংরেজ হয়েছিল দেশের শাসক। নবাবি আমলে রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। হিন্দুরা তেমন ফারসি জানত না, মুসলমানরা জানত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা দখল করে নেওয়ার পর হিন্দুরা ইংরেজি স্কুল-কলেজে পড়ে ইংরেজি শিখে নেয়। যেহেতু ইংরেজরা মুসলমানদের হাত থেকে শাসনক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, সেহেতু তারা ইংরেজদের সংস্পর্শে যেত না। প্রথম দিকে তেমন কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়, সব চাকরি-বাকরি, অফিস-আদালতে হিন্দু সম্প্রদায় কাজ করছে। মুসলিম সম্প্রদায় একেবারে পেছনে। প্রায় ১০০ বছর এটা চলেছে। তারপর যে কোনোভাবে মুসলিমরাও লেখাপড়া শিখতে শুরু করে, সেই সঙ্গে ইংরেজিও। কিন্তু প্রথম প্রথম যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। আদতে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। ভারত উপমহাদেশ ভাগ করে ইংরেজ চলে যায়। একদিকে পাকিস্তান, আরেক দিকে ভারত। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববঙ্গে এসেই বলে বসলেন, Urdu and Urdu will be the state language of Pakistan. আবার সেই ফারসি থেকে ইংরেজির মতো। রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে আমরা বাঙালিরা শতকরা ১০০ জন মূর্খ হয়ে যেতাম। কারণ আমরা উর্দু জানতাম না। আর প্রকৃত অর্থে উর্দু কোনো দেশের বা জাতির মাতৃভাষা নয়। উর্দু ছিল ছাউনির ভাষা। বিশেষ করে এটা মিলিটারিরা ব্যবহার করত। পশ্চিম পাকিস্তানেও পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি, বেলুচি নানাজনের নানান ভাষা। কিন্তু উর্দু কারও মাতৃভাষা নয়। সেটাই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাঙালি ছাত্র-যুবক, সাধারণ মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। তাই ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন ’৫২ তে এসে সফল পরিণতি পায়। হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জননেতা শামসুল হক ভাষা আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তখন শেখ মুজিবও ছিলেন ছায়ার মতো। রাজপথে আর কারাগারে যেখানেই থাকুন তিনি ছিলেন। এজন্য তিনি অত বড় নেতা হয়েছিলেন। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পার্লামেন্টে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম দাঁড়িয়েছিলেন। আজ আমাদের যে উন্নতি, আজ আমাদের যে প্রসিদ্ধি, বিশ্বজোড়া যে ব্যাপ্তি তার প্রায় সবই ভাষা অবলম্বন করে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপিত হয় ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরম সৌভাগ্য এই মহান দিনে আমার লেখার সুযোগ হয়েছে। ভাষার প্রতি মমত্ব না থাকলে, দেশের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা না থাকলে মায়ের প্রতিও ভালোবাসা থাকে না। আমরা আরও শ্বাশত বাঙালি হই, বাংলা ভাষাকে বুকে লালন করি, সর্বত্র ব্যবহার করি এই হোক মহান দিনের শপথ।

আসলে আমার চারদিকে বিপদ। কতজন কত কিছু মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে অনেকে আমাকে সবকিছু মনে করে। তাদের ধারণা আমি ইচ্ছা করলেই সব পারি। আমি বললেই সবকিছু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ আমাকে নিয়ে তাদের মতো করে ভাবে। গত পরশু একজন ফোন করেছিল। তার মারাত্মক গলার জোর। কোনো বিনয় নেই, কথাবার্তায় রুচির লেশমাত্র নেই। হঠাৎই ফোন করে বললেন, ‘বঙ্গবীর বলছেন? কাদের সিদ্দিকী?’ আমি যেভাবে কথা বলি, যেভাবে অভ্যাস হয়েছে সেভাবেই বলেছিলাম, হ্যাঁ বলছি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, ‘আমি একটা বই লিখছি। মাটিকাটা যুদ্ধে আপনাদের কত সৈন্য ছিল? কয়জন ছিল?’ সংখ্যা বলার আগেই উনি বললেন, ‘জাহাজমারা যুদ্ধে আপনারা কয়জন পাকিস্তানি হত্যা করেছেন? কত অস্ত্র লুট করেছেন?’ আমি খুব অবাক হয়েছিলাম লেখকের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা শুনে। তাকে বলেছিলাম, আমরা তো একটা অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করিনি। আমরা একজন মিলিটারিকেও হত্যা করিনি। আর কয়জন যোদ্ধা ছিল এটা তো গুনে বলা যাবে না। কিন্তু কয়েকটা কোম্পানি সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, যুদ্ধ করেছে তা বলা যাবে। আমরা লুট করতে যাব কেন? আমরা জয় করেছি, দখল করেছি। তিনি বললেন, ‘না না। হ্যাঁ, আমার একটু ভুল হয়েছে।’ যে স্বতঃস্ফূর্ততায় তিনি কয়টা মিলিটারি হত্যা করেছি, কয়টা অস্ত্র লুট করেছি বলেছিলেন সে রকম স্বতঃস্ফূর্ততায় ভুল হয়েছে বলায় ছিল না। ফোন ছেড়ে দিয়েছিলাম। ইদানীং অনেক কটুকথাই আমার খারাপ লাগে না। এটা সেই ছোটকাল থেকেই ট্রেনিং পেয়ে এসেছিলাম। তবু ফোন ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফোন নম্বরটা খেয়াল করে রেখেছিলাম। চিন্তা ছিল অযথা ওই ফোন আর ধরব না। কয়েক মিনিট পর আরেকটা ফোন ধরতেই বুঝলাম সেই ভদ্রলোক। তার আরও ফোন নম্বর আছে। তিনি আবার বললেন, তিনি বই লিখবেন তাই তার দরকার। তখন বলেছিলাম, বই পড়ে দেখবেন, কাদেরিয়া বাহিনীর বই। কে প্রকাশ করেছে? কী নাম তার? কেন যেন বলেছিলাম, অনন্যা প্রকাশনী বইয়ের নাম ‘স্বাধীনতা ’৭১’। ১৬ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু প্রকাশনী নাম দিয়ে নিজেরা কয়েক হাজার বই ছেপেছিলাম। সেখানে তখনকার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা কয়েক লাখ টাকা দিয়েছিলেন বইটা ছাপার জন্য। সেই বই ‘স্বাধীনতা ’৭১’। অনন্যা প্রকাশনী ছেপেছে। দেদার বিক্রি করছে। সেই বইয়ের কথা বলেছিলাম। ভদ্রলোকের ফোনের পর সারাটা দিন অস্বস্তিতে গেছে। যতই শান্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। একজন একটা বই লিখবেন নিশ্চয়ই মোটামুটি শিক্ষিত মানুষ। তার চিন্তা-চেতনা-চৈতন্য যদি এমন হয় আমরা হত্যা করেছি। যুদ্ধ ক্ষেত্রে কেউ কাউকে হত্যা করে না। যুদ্ধ শেষে কেউ যদি ধরা পড়ে তা-ও তিনি অপরাধী হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, হত্যা করা হয় না। হত্যা আর শাস্তি দেওয়ার মধ্যে কত পার্থক্য একজন লেখক যদি তা বুঝতে না পারেন তাহলে তিনি কী লিখবেন? আসলে এমন চেতনার মানুষের জন্য আমাদের দুর্ভাগ্য। লুটেরারা লুট করে। যুদ্ধ জয় করে কোনো কিছু দখল করা হয়, জয় করা হয়। তাকে যদি ভদ্রলোক লুট ভাবেন তাহলে উত্তর কী? এমনিতেই চোখের সামনে দেখছি শত শত লেখক, রেডিও-টেলিভিশনের প্রতিবেদক, উপস্থাপক অবলীলায় ‘পাক বাহিনী, পাক বাহিনী’ বলে চলেছেন, লিখে চলেছেন। এত ঘরদুয়ার জ্বালাও-পোড়াওকারী, মা-বোনের সম্মান-সম্ভ্রম নষ্টকারী, লাখো মানুষ হত্যাকারী যদি ‘পাক’ বাহিনী হয়, তাহলে কদিন পর মুক্তিবাহিনী তো নাপাক বাহিনীতে পরিণত হবে। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিবাহিনীকে বলবে নাপাক বাহিনী আর হানাদার পাকিস্তানি জল্লাদদের এত নাপাক কাজের পরও যদি পাক বাহিনী বলা হয় এই জ্বালা থেকে কবে মুক্তি পাব, জীবিতকালে পাব কি না বুঝে উঠতে পারছি না। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সত্যিই আমরা রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করেছিলাম। ৯৬ হাজার সেনা সদস্য ও অন্যান্যকে ধরে পাকিস্তান পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের পক্ষের দালালদের আমরা স্পর্শ করতে বা হাত দিতে পারিনি। তাদের পক্ষের যে লেখক বুদ্ধিজীবী ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হওয়ায় একই অবস্থানে ছিল। বরং টাকাপয়সা, সাহায্য-সামগ্রী আগের চাইতে বেশি পেত। পাকিস্তানি যেসব ব্যবসায়ী ছিল পাকিস্তানের পক্ষে অর্থ জোগান দিত তারা আগের চাইতেও ভালো ছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রেও পাকিস্তানিদের যে কাঠামো সেখানে আমরা হাতও দিইনি, দিতে পারিনি। এমনকি পাকিস্তানের অনেক দালাল আমাদের মধ্যে ঢুকে বাংলাদেশের প্রকৃত ভক্তের চাইতে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। আমাকে ফোন করা ভদ্রলোককে দালাল বলতে চাই না। কিন্তু তার চেতনার বড় বেশি অভাব। চেতনার অভাবের কারণে ধীরে ধীরে আমরা কেমন যেন বড় বেশি ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছি।

 

কিছুদিন আগে দিনাজপুরের এক ভদ্রলোক তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। তার এখন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কালিহাতী উপজেলার রতনগঞ্জ বাজারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক উপকেন্দ্রে থাকতেন। খুব সম্ভবত স্টোরকিপার। আইয়ুব খানের আমল থেকে পানি সেচের জন্য, ডিজেল, পোকামাকড় মারার জন্য ওষুধ এবং সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি উপকেন্দ্রে পাওয়া যেত। এমন একটা ছিল রতনগঞ্জ কেন্দ্র। যুদ্ধ শুরু হলে চাকরিবাকরি ছেড়ে তিনি বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলেন। দুই মাস পর আবার এসে চাকরিতে যোগদান করেন। যেহেতু রতনগঞ্জ ছিল আমাদের দখলে সেহেতু তার আর রতনগঞ্জ আসতে হয়নি, কালিহাতীতে থেকেছেন। মাসে মাসে বেতন নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হলে আবার সব ঠিকঠাক। এখন তার মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের নিয়মিত বেতন খেয়েও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন, আমি একটা সার্টিফিকেট দিলেই সবকিছু হয়ে যায়। তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ইচ্ছা জাগার প্রধান কারণ তার বাড়ির আশপাশে অনেকেই নাকি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। অথচ তারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ভদ্রলোক বুঝলেন কী করে আমি তা বুঝতে পারিনি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কালিহাতী ছিলেন। সীমান্তের এত কাছে তার বাড়ির দিকে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিল কে ছিল না এটা তো তার জানার কথা নয়। কিন্তু তার মনে হয়েছে তার বাড়ির কাছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যারা আছেন তারা সবাই ভুল। কেউ তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তারা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেন, তাহলে তিনি কী দোষ করেছেন? অথচ তিনি পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। দেশ স্বাধীন হলে যদি তাদের চাকরি চলে যেত, পাকিস্তানে চাকরি করার জন্য যদি বছর দশেক জেল হতো তাহলে এদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সাধ জাগত না। আমরা যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি তাদের চাইতে যারা যুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তান সরকারের নানা চাকরিবাকরিতে বহাল ছিলেন, স্বাধীনতার পর তাদের চাকরিবাকরি বহাল থাকায় এমনকি সরকারি সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়ায় তারা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে গেছেন। যুদ্ধের নয় মাস যারা অমানবিক জীবনযাপন করেছেন, না খেয়ে কষ্ট করেছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি তাদের চাইতে পাকিস্তানি দালালরা স্বাধীনতার অনেক ফসল ভোগ করেছেন বা করছেন।

 

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো জীবিত উদ্ধার হচ্ছে। এ আল্লাহর এক অপরিসীম ক্যারিশমা। ১৩-১৪ দিন পরও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত থাকা এক অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিধস একটু অন্যরকম। কোনো কোনো জায়গায় পুরো ভবন ধসে পড়েছে। অনেকটা দেবে গেছে। তাতে অনেক ঘরদুয়ার মাটির নিচে গেলেও অক্ষত আছে। এ কারণেই হয়তো শিশুসহ অনেককে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে। আল্লাহর দয়ার শেষ নেই। এ উদ্ধার অভিযানে আমাদের সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা কাজ করছে। তাদের সুনামে বুক ভরে যায়, গর্ববোধ হয়। স্বাধীনতার পর থেকে দেখছি আমাদের লোকজন যেখানেই যায় সেখানেই সম্মান বৃদ্ধি করে, দেশের গৌরব বাড়ায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারাই অনেকে দেশের সম্মানিত নাগরিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না, সম্মান দেখায় না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ার মানুষকে হেফাজত করেন। তাদের ওপর থেকে সব বালামুসিবত সরিয়ে নেন, তুলে নেন। তারা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

 

বহুদিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি ওসমানী মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের অসচ্ছল না বলে বীরযোদ্ধা বললেই হতো। ২৫-৩০ মিনিট দেরিতে পৌঁছে লজ্জাবোধ করছিলাম। কিন্তু হলে ঢুকে বুঝলাম আমার দেরি হয়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান উদ্বোধনের কথা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি উদ্বোধন করবেন। রাস্তায় যানজট থাকায় আমার একটু দেরি হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস প্রদানের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন। তাই তাঁকে না বলতে পারিনি। কদিন আগে ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় তিনি টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন এবং চমৎকার বলেছেন। আদতে আ ক ম মোজাম্মেল হক ছিলেন লতিফ ভাইয়ের একেবারে একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ কর্মী। তাই আ ক ম মোজাম্মেল হকের অনুরোধ ফেলতে পারিনি। গিয়েছিলাম তাঁর অনুষ্ঠানে। সামনে দুটো সিট খালি রাখা ছিল না খালি ছিল, জানি না। স্টিকার ছিল মন্ত্রীর পদমর্যাদার। কিন্তু পাশেই দেখলাম কাদেরিয়া বাহিনীর আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, মিরপুরের আমির হোসেন মোল্লা বসে আছে। ডান পাশে ছিলেন দুজন সচিব। সেখানেই বসেছিলাম। সঙ্গে ছিল আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক। ওকে পাশে নিয়েই বসেছিলাম। আবদুল্লাহ লেখাপড়া জানে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে আমি আবদুল্লাহর সমান সাহসী যোদ্ধা দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। আবদুস সবুর বীরবিক্রম আমার চোখে সবচাইতে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। তার পরই হয়তো স্থান হবে ফজলুল হক বীরপ্রতীকের। যে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর আমার দেহরক্ষী বাহিনীর নেতৃত্ব করেছে। হলে যাওয়ার পর ৪০-৫০ মিনিট বসেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় তিনি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছিলেন না। তিনি যখন ভার্চুয়ালি ক্যামেরার সামনে আসেন তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যথাযথ সম্মানে তিনি চমৎকারভাবে অনুষ্ঠান সূচনা করেন। ভাষণ দেন মুক্তিযদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। অনুষ্ঠানের সভাপতি মুক্তিযদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার পরই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য দেন। টেলিভিশনে অনেক অনুষ্ঠানই শুনি, দেখি। কিন্তু ওসমানী মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের চাবি প্রদানের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই ভালো বলেছেন। সরাসরি কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা ইন্টারনেটে যুক্ত ছিল। সময়ের অভাবে নড়াইলের একজনকে বীর নিবাসের চাবি দেওয়া হয়েছে এবং চাবি পেয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা আমার ভালো লেগেছে। ওখানে কয়েকটি বিষয় কেমন যেন খাপছাড়া মনে হয়েছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা না বলে বীরযোদ্ধার হাতে বীর নিবাসের চাবি প্রদান বললে অনুষ্ঠানের কোনো হানি হতো না। অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলার কোনো মানেই হয় না। এর আগে কোথাও শুনেছি কি না মনে পড়ে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা এ-ই যথেষ্ট। এর জন্য জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বীর নিবাস প্রদান সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক কিছুই আমার ধারণায় নেই। তবে ২ কাঠা জমির ওপর বীর নিবাস আমার কাছে খুব সঠিক মনে হয়নি। বীর নিবাস প্রদান উদ্যোগটা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু ৭৩২ স্কয়ার ফুটের বীর নিবাসের জন্য খরচ ১৪ লাখ কয়েক হাজার। এই খরচে মানসম্পন্ন কোনো ইট-বালুর গাঁথুনির কাজ কখনো সুন্দর, মানসম্পন্ন হতে পারে না। এখন সিমেন্টের ঘরবাড়ি তৈরিতে সর্বনিম্নœ প্রাক্কলন ২৭০০-২৮০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে বীর নিবাস মানসম্পন্ন করে তৈরি করতে হলে হাজার পনের শ-দুই হাজারের নিচে মোটেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে ৭৩২ স্কয়ার ফুট ১ কাঠার ১২ স্কয়ার ফুট বেশি। ৭২০ স্কয়ার ফুটে ১ কাঠা। ৭৩২ স্কয়ার ফুটের দুই কামরা, বারান্দা এবং বৈঠকখানা না করে ২ কাঠার ১৪৪০ স্কয়ার ফুট, জেলায় ৫ কাঠার ওপর ২ কাঠা বাড়ি, ৩ কাঠা আঙিনা। উপজেলায় ১০ কাঠায় ২ কাঠা বাড়ি, ৮ কাঠা আঙিনা। ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে ২০ কাঠায় ২ কাঠা বাড়ি, ১৮ কাঠা আঙিনা এমন একটা প্রজেক্ট নিলে ভালো হতো। জানি না, কেন ২ কাঠার এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজধানীতে ২ কাঠা হলে হয়তো কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু গ্রাম পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত নালা-ডোবায় ২ কাঠা জমির ওপর ১ কাঠার বাড়ি ভাবীকালে খুব একটা প্রশংসা পাবে না। তাই পরিকল্পনাগুলো একটু তলিয়ে দেখতে, একটু ভেবে দেখতে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং সবার আগে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছিলাম, সেই অধিকারে আমার এই সামান্য পরামর্শ। ভেবে দেখলেও দেখতে পারেন।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com    সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুই-এক বছর দেখতে চাই : নুর

» চোখের সেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ আগ্রহী : ইউনূস

» ভারতে বসে হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন : এ্যানি

» স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ২০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দে ইইউর সমর্থন চাইল বাংলাদেশ

» ধাপে ধাপে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে সরকার : হাসান আরিফ

» বিমান বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা

» অনলাইনে আয়কর পরিশোধ সহজ করতে এনবিআর-এর সাথে পার্টনারশিপ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

» বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

» ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি আলালের

» থানায় এসে কেউ যেন সেবা বঞ্চিত না হয়: ডিএমপি কমিশনার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বীর নিবাসের চাবি

ছবি সংগৃহীত

 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : আজ ভাষা আন্দোলনের রক্তস্নাত একটি দিন। ১৭৫৭ সালে পলাশীতে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। ইংরেজ হয়েছিল দেশের শাসক। নবাবি আমলে রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। হিন্দুরা তেমন ফারসি জানত না, মুসলমানরা জানত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা দখল করে নেওয়ার পর হিন্দুরা ইংরেজি স্কুল-কলেজে পড়ে ইংরেজি শিখে নেয়। যেহেতু ইংরেজরা মুসলমানদের হাত থেকে শাসনক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, সেহেতু তারা ইংরেজদের সংস্পর্শে যেত না। প্রথম দিকে তেমন কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়, সব চাকরি-বাকরি, অফিস-আদালতে হিন্দু সম্প্রদায় কাজ করছে। মুসলিম সম্প্রদায় একেবারে পেছনে। প্রায় ১০০ বছর এটা চলেছে। তারপর যে কোনোভাবে মুসলিমরাও লেখাপড়া শিখতে শুরু করে, সেই সঙ্গে ইংরেজিও। কিন্তু প্রথম প্রথম যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। আদতে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। ভারত উপমহাদেশ ভাগ করে ইংরেজ চলে যায়। একদিকে পাকিস্তান, আরেক দিকে ভারত। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববঙ্গে এসেই বলে বসলেন, Urdu and Urdu will be the state language of Pakistan. আবার সেই ফারসি থেকে ইংরেজির মতো। রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে আমরা বাঙালিরা শতকরা ১০০ জন মূর্খ হয়ে যেতাম। কারণ আমরা উর্দু জানতাম না। আর প্রকৃত অর্থে উর্দু কোনো দেশের বা জাতির মাতৃভাষা নয়। উর্দু ছিল ছাউনির ভাষা। বিশেষ করে এটা মিলিটারিরা ব্যবহার করত। পশ্চিম পাকিস্তানেও পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি, বেলুচি নানাজনের নানান ভাষা। কিন্তু উর্দু কারও মাতৃভাষা নয়। সেটাই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাঙালি ছাত্র-যুবক, সাধারণ মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। তাই ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন ’৫২ তে এসে সফল পরিণতি পায়। হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জননেতা শামসুল হক ভাষা আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তখন শেখ মুজিবও ছিলেন ছায়ার মতো। রাজপথে আর কারাগারে যেখানেই থাকুন তিনি ছিলেন। এজন্য তিনি অত বড় নেতা হয়েছিলেন। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পার্লামেন্টে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম দাঁড়িয়েছিলেন। আজ আমাদের যে উন্নতি, আজ আমাদের যে প্রসিদ্ধি, বিশ্বজোড়া যে ব্যাপ্তি তার প্রায় সবই ভাষা অবলম্বন করে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপিত হয় ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরম সৌভাগ্য এই মহান দিনে আমার লেখার সুযোগ হয়েছে। ভাষার প্রতি মমত্ব না থাকলে, দেশের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা না থাকলে মায়ের প্রতিও ভালোবাসা থাকে না। আমরা আরও শ্বাশত বাঙালি হই, বাংলা ভাষাকে বুকে লালন করি, সর্বত্র ব্যবহার করি এই হোক মহান দিনের শপথ।

আসলে আমার চারদিকে বিপদ। কতজন কত কিছু মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে অনেকে আমাকে সবকিছু মনে করে। তাদের ধারণা আমি ইচ্ছা করলেই সব পারি। আমি বললেই সবকিছু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ আমাকে নিয়ে তাদের মতো করে ভাবে। গত পরশু একজন ফোন করেছিল। তার মারাত্মক গলার জোর। কোনো বিনয় নেই, কথাবার্তায় রুচির লেশমাত্র নেই। হঠাৎই ফোন করে বললেন, ‘বঙ্গবীর বলছেন? কাদের সিদ্দিকী?’ আমি যেভাবে কথা বলি, যেভাবে অভ্যাস হয়েছে সেভাবেই বলেছিলাম, হ্যাঁ বলছি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, ‘আমি একটা বই লিখছি। মাটিকাটা যুদ্ধে আপনাদের কত সৈন্য ছিল? কয়জন ছিল?’ সংখ্যা বলার আগেই উনি বললেন, ‘জাহাজমারা যুদ্ধে আপনারা কয়জন পাকিস্তানি হত্যা করেছেন? কত অস্ত্র লুট করেছেন?’ আমি খুব অবাক হয়েছিলাম লেখকের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা শুনে। তাকে বলেছিলাম, আমরা তো একটা অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করিনি। আমরা একজন মিলিটারিকেও হত্যা করিনি। আর কয়জন যোদ্ধা ছিল এটা তো গুনে বলা যাবে না। কিন্তু কয়েকটা কোম্পানি সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, যুদ্ধ করেছে তা বলা যাবে। আমরা লুট করতে যাব কেন? আমরা জয় করেছি, দখল করেছি। তিনি বললেন, ‘না না। হ্যাঁ, আমার একটু ভুল হয়েছে।’ যে স্বতঃস্ফূর্ততায় তিনি কয়টা মিলিটারি হত্যা করেছি, কয়টা অস্ত্র লুট করেছি বলেছিলেন সে রকম স্বতঃস্ফূর্ততায় ভুল হয়েছে বলায় ছিল না। ফোন ছেড়ে দিয়েছিলাম। ইদানীং অনেক কটুকথাই আমার খারাপ লাগে না। এটা সেই ছোটকাল থেকেই ট্রেনিং পেয়ে এসেছিলাম। তবু ফোন ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফোন নম্বরটা খেয়াল করে রেখেছিলাম। চিন্তা ছিল অযথা ওই ফোন আর ধরব না। কয়েক মিনিট পর আরেকটা ফোন ধরতেই বুঝলাম সেই ভদ্রলোক। তার আরও ফোন নম্বর আছে। তিনি আবার বললেন, তিনি বই লিখবেন তাই তার দরকার। তখন বলেছিলাম, বই পড়ে দেখবেন, কাদেরিয়া বাহিনীর বই। কে প্রকাশ করেছে? কী নাম তার? কেন যেন বলেছিলাম, অনন্যা প্রকাশনী বইয়ের নাম ‘স্বাধীনতা ’৭১’। ১৬ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু প্রকাশনী নাম দিয়ে নিজেরা কয়েক হাজার বই ছেপেছিলাম। সেখানে তখনকার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা কয়েক লাখ টাকা দিয়েছিলেন বইটা ছাপার জন্য। সেই বই ‘স্বাধীনতা ’৭১’। অনন্যা প্রকাশনী ছেপেছে। দেদার বিক্রি করছে। সেই বইয়ের কথা বলেছিলাম। ভদ্রলোকের ফোনের পর সারাটা দিন অস্বস্তিতে গেছে। যতই শান্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। একজন একটা বই লিখবেন নিশ্চয়ই মোটামুটি শিক্ষিত মানুষ। তার চিন্তা-চেতনা-চৈতন্য যদি এমন হয় আমরা হত্যা করেছি। যুদ্ধ ক্ষেত্রে কেউ কাউকে হত্যা করে না। যুদ্ধ শেষে কেউ যদি ধরা পড়ে তা-ও তিনি অপরাধী হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, হত্যা করা হয় না। হত্যা আর শাস্তি দেওয়ার মধ্যে কত পার্থক্য একজন লেখক যদি তা বুঝতে না পারেন তাহলে তিনি কী লিখবেন? আসলে এমন চেতনার মানুষের জন্য আমাদের দুর্ভাগ্য। লুটেরারা লুট করে। যুদ্ধ জয় করে কোনো কিছু দখল করা হয়, জয় করা হয়। তাকে যদি ভদ্রলোক লুট ভাবেন তাহলে উত্তর কী? এমনিতেই চোখের সামনে দেখছি শত শত লেখক, রেডিও-টেলিভিশনের প্রতিবেদক, উপস্থাপক অবলীলায় ‘পাক বাহিনী, পাক বাহিনী’ বলে চলেছেন, লিখে চলেছেন। এত ঘরদুয়ার জ্বালাও-পোড়াওকারী, মা-বোনের সম্মান-সম্ভ্রম নষ্টকারী, লাখো মানুষ হত্যাকারী যদি ‘পাক’ বাহিনী হয়, তাহলে কদিন পর মুক্তিবাহিনী তো নাপাক বাহিনীতে পরিণত হবে। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিবাহিনীকে বলবে নাপাক বাহিনী আর হানাদার পাকিস্তানি জল্লাদদের এত নাপাক কাজের পরও যদি পাক বাহিনী বলা হয় এই জ্বালা থেকে কবে মুক্তি পাব, জীবিতকালে পাব কি না বুঝে উঠতে পারছি না। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সত্যিই আমরা রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করেছিলাম। ৯৬ হাজার সেনা সদস্য ও অন্যান্যকে ধরে পাকিস্তান পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের পক্ষের দালালদের আমরা স্পর্শ করতে বা হাত দিতে পারিনি। তাদের পক্ষের যে লেখক বুদ্ধিজীবী ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হওয়ায় একই অবস্থানে ছিল। বরং টাকাপয়সা, সাহায্য-সামগ্রী আগের চাইতে বেশি পেত। পাকিস্তানি যেসব ব্যবসায়ী ছিল পাকিস্তানের পক্ষে অর্থ জোগান দিত তারা আগের চাইতেও ভালো ছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রেও পাকিস্তানিদের যে কাঠামো সেখানে আমরা হাতও দিইনি, দিতে পারিনি। এমনকি পাকিস্তানের অনেক দালাল আমাদের মধ্যে ঢুকে বাংলাদেশের প্রকৃত ভক্তের চাইতে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। আমাকে ফোন করা ভদ্রলোককে দালাল বলতে চাই না। কিন্তু তার চেতনার বড় বেশি অভাব। চেতনার অভাবের কারণে ধীরে ধীরে আমরা কেমন যেন বড় বেশি ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছি।

 

কিছুদিন আগে দিনাজপুরের এক ভদ্রলোক তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। তার এখন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কালিহাতী উপজেলার রতনগঞ্জ বাজারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক উপকেন্দ্রে থাকতেন। খুব সম্ভবত স্টোরকিপার। আইয়ুব খানের আমল থেকে পানি সেচের জন্য, ডিজেল, পোকামাকড় মারার জন্য ওষুধ এবং সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি উপকেন্দ্রে পাওয়া যেত। এমন একটা ছিল রতনগঞ্জ কেন্দ্র। যুদ্ধ শুরু হলে চাকরিবাকরি ছেড়ে তিনি বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলেন। দুই মাস পর আবার এসে চাকরিতে যোগদান করেন। যেহেতু রতনগঞ্জ ছিল আমাদের দখলে সেহেতু তার আর রতনগঞ্জ আসতে হয়নি, কালিহাতীতে থেকেছেন। মাসে মাসে বেতন নিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হলে আবার সব ঠিকঠাক। এখন তার মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের নিয়মিত বেতন খেয়েও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন, আমি একটা সার্টিফিকেট দিলেই সবকিছু হয়ে যায়। তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ইচ্ছা জাগার প্রধান কারণ তার বাড়ির আশপাশে অনেকেই নাকি মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। অথচ তারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ভদ্রলোক বুঝলেন কী করে আমি তা বুঝতে পারিনি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কালিহাতী ছিলেন। সীমান্তের এত কাছে তার বাড়ির দিকে কে মুক্তিযোদ্ধা ছিল কে ছিল না এটা তো তার জানার কথা নয়। কিন্তু তার মনে হয়েছে তার বাড়ির কাছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যারা আছেন তারা সবাই ভুল। কেউ তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তারা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেন, তাহলে তিনি কী দোষ করেছেন? অথচ তিনি পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। দেশ স্বাধীন হলে যদি তাদের চাকরি চলে যেত, পাকিস্তানে চাকরি করার জন্য যদি বছর দশেক জেল হতো তাহলে এদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সাধ জাগত না। আমরা যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি তাদের চাইতে যারা যুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তান সরকারের নানা চাকরিবাকরিতে বহাল ছিলেন, স্বাধীনতার পর তাদের চাকরিবাকরি বহাল থাকায় এমনকি সরকারি সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়ায় তারা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে গেছেন। যুদ্ধের নয় মাস যারা অমানবিক জীবনযাপন করেছেন, না খেয়ে কষ্ট করেছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি তাদের চাইতে পাকিস্তানি দালালরা স্বাধীনতার অনেক ফসল ভোগ করেছেন বা করছেন।

 

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো জীবিত উদ্ধার হচ্ছে। এ আল্লাহর এক অপরিসীম ক্যারিশমা। ১৩-১৪ দিন পরও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত থাকা এক অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিধস একটু অন্যরকম। কোনো কোনো জায়গায় পুরো ভবন ধসে পড়েছে। অনেকটা দেবে গেছে। তাতে অনেক ঘরদুয়ার মাটির নিচে গেলেও অক্ষত আছে। এ কারণেই হয়তো শিশুসহ অনেককে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে। আল্লাহর দয়ার শেষ নেই। এ উদ্ধার অভিযানে আমাদের সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা কাজ করছে। তাদের সুনামে বুক ভরে যায়, গর্ববোধ হয়। স্বাধীনতার পর থেকে দেখছি আমাদের লোকজন যেখানেই যায় সেখানেই সম্মান বৃদ্ধি করে, দেশের গৌরব বাড়ায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারাই অনেকে দেশের সম্মানিত নাগরিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না, সম্মান দেখায় না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ার মানুষকে হেফাজত করেন। তাদের ওপর থেকে সব বালামুসিবত সরিয়ে নেন, তুলে নেন। তারা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

 

বহুদিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি ওসমানী মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের অসচ্ছল না বলে বীরযোদ্ধা বললেই হতো। ২৫-৩০ মিনিট দেরিতে পৌঁছে লজ্জাবোধ করছিলাম। কিন্তু হলে ঢুকে বুঝলাম আমার দেরি হয়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান উদ্বোধনের কথা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি উদ্বোধন করবেন। রাস্তায় যানজট থাকায় আমার একটু দেরি হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস প্রদানের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন। তাই তাঁকে না বলতে পারিনি। কদিন আগে ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় তিনি টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন এবং চমৎকার বলেছেন। আদতে আ ক ম মোজাম্মেল হক ছিলেন লতিফ ভাইয়ের একেবারে একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ কর্মী। তাই আ ক ম মোজাম্মেল হকের অনুরোধ ফেলতে পারিনি। গিয়েছিলাম তাঁর অনুষ্ঠানে। সামনে দুটো সিট খালি রাখা ছিল না খালি ছিল, জানি না। স্টিকার ছিল মন্ত্রীর পদমর্যাদার। কিন্তু পাশেই দেখলাম কাদেরিয়া বাহিনীর আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, মিরপুরের আমির হোসেন মোল্লা বসে আছে। ডান পাশে ছিলেন দুজন সচিব। সেখানেই বসেছিলাম। সঙ্গে ছিল আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক। ওকে পাশে নিয়েই বসেছিলাম। আবদুল্লাহ লেখাপড়া জানে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে আমি আবদুল্লাহর সমান সাহসী যোদ্ধা দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। আবদুস সবুর বীরবিক্রম আমার চোখে সবচাইতে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। তার পরই হয়তো স্থান হবে ফজলুল হক বীরপ্রতীকের। যে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর আমার দেহরক্ষী বাহিনীর নেতৃত্ব করেছে। হলে যাওয়ার পর ৪০-৫০ মিনিট বসেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় তিনি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছিলেন না। তিনি যখন ভার্চুয়ালি ক্যামেরার সামনে আসেন তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যথাযথ সম্মানে তিনি চমৎকারভাবে অনুষ্ঠান সূচনা করেন। ভাষণ দেন মুক্তিযদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। অনুষ্ঠানের সভাপতি মুক্তিযদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার পরই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য দেন। টেলিভিশনে অনেক অনুষ্ঠানই শুনি, দেখি। কিন্তু ওসমানী মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের চাবি প্রদানের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই ভালো বলেছেন। সরাসরি কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা ইন্টারনেটে যুক্ত ছিল। সময়ের অভাবে নড়াইলের একজনকে বীর নিবাসের চাবি দেওয়া হয়েছে এবং চাবি পেয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা আমার ভালো লেগেছে। ওখানে কয়েকটি বিষয় কেমন যেন খাপছাড়া মনে হয়েছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা না বলে বীরযোদ্ধার হাতে বীর নিবাসের চাবি প্রদান বললে অনুষ্ঠানের কোনো হানি হতো না। অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলার কোনো মানেই হয় না। এর আগে কোথাও শুনেছি কি না মনে পড়ে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা জাতির পিতা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা এ-ই যথেষ্ট। এর জন্য জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বীর নিবাস প্রদান সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক কিছুই আমার ধারণায় নেই। তবে ২ কাঠা জমির ওপর বীর নিবাস আমার কাছে খুব সঠিক মনে হয়নি। বীর নিবাস প্রদান উদ্যোগটা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু ৭৩২ স্কয়ার ফুটের বীর নিবাসের জন্য খরচ ১৪ লাখ কয়েক হাজার। এই খরচে মানসম্পন্ন কোনো ইট-বালুর গাঁথুনির কাজ কখনো সুন্দর, মানসম্পন্ন হতে পারে না। এখন সিমেন্টের ঘরবাড়ি তৈরিতে সর্বনিম্নœ প্রাক্কলন ২৭০০-২৮০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে বীর নিবাস মানসম্পন্ন করে তৈরি করতে হলে হাজার পনের শ-দুই হাজারের নিচে মোটেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে ৭৩২ স্কয়ার ফুট ১ কাঠার ১২ স্কয়ার ফুট বেশি। ৭২০ স্কয়ার ফুটে ১ কাঠা। ৭৩২ স্কয়ার ফুটের দুই কামরা, বারান্দা এবং বৈঠকখানা না করে ২ কাঠার ১৪৪০ স্কয়ার ফুট, জেলায় ৫ কাঠার ওপর ২ কাঠা বাড়ি, ৩ কাঠা আঙিনা। উপজেলায় ১০ কাঠায় ২ কাঠা বাড়ি, ৮ কাঠা আঙিনা। ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে ২০ কাঠায় ২ কাঠা বাড়ি, ১৮ কাঠা আঙিনা এমন একটা প্রজেক্ট নিলে ভালো হতো। জানি না, কেন ২ কাঠার এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজধানীতে ২ কাঠা হলে হয়তো কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু গ্রাম পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত নালা-ডোবায় ২ কাঠা জমির ওপর ১ কাঠার বাড়ি ভাবীকালে খুব একটা প্রশংসা পাবে না। তাই পরিকল্পনাগুলো একটু তলিয়ে দেখতে, একটু ভেবে দেখতে একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং সবার আগে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছিলাম, সেই অধিকারে আমার এই সামান্য পরামর্শ। ভেবে দেখলেও দেখতে পারেন।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com    সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com